দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। ফ্ল্যাটে ঢুকতেই কক্ষের বিছানায় মেলে মা শাহিদা বেগম ও ১২ বছরের ছেলে জয়ের গলাকাটা রক্তাক্ত মরদেহ। তার পাশের কক্ষ থেকে গামছা দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় স্বামী মোক্তারুল হোসেন বাবুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আশুলিয়ায় পোশাকশ্রমিক দম্পতি ও শিশুকে হত্যার কোনো কিনারা করতে পারছে না পুলিশ।

দুর্গন্ধের উৎসের খবর নিতেই শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ১০ বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক এই ঘটনা। পুলিশের ধারণা, দুই একদিন আগে তাদের হত্যা করা হয়েছে। ঘরে ছিল রান্না করা খিচুড়ি। এ ছাড়া চা খাওয়া হয়েছে এমন পাঁচ-ছয়টা কাপও ছিল।

আশুলিয়ার উত্তর গাজীরচটে শেখ মেহেদী হাসানের ছয়তলা ভবনের চারতলার একটি ফ্লাটে প্রায় আট বছর ধরে এই দম্পতি বসবাস করে আসছিলেন। তারা পেশায় পোশাকশ্রমিক। মরদেহ উদ্ধার করে রবিবার (১ অক্টোবর) সকালে তাদের মরদেহ ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রাতে ছুটে আসে জেলা পুলিশ সুপার, র‍্যাব কর্মকর্তা ও সিআইডির দল।
পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানায়, এমন ভয়ংকর ঘটনার টু শব্দটিও যেন প্রতিবেশীসহ কেউ টের পেলেন না! তাহলে তাদের চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়া হয়েছিল। তারপর তাদের তিনজনকেই ধারাল অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। ঘরে রান্না করা খিচুড়ি ছিল। এ ছাড়া পাঁচ থেকে ছয়টা কাপ রয়েছে যেগুলোতে চা খাওয়া হয়েছে- এমন চিত্রও দেখা গেছে। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে অতিথি হিসেবে হয়তো খুনিরা ঘরে প্রবেশ করেছিল। গ্রেপ্তারের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবুল ও শাহিদা পরস্পরকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। এ দম্পতির ১২ বছরের ছেলে জয় আশুলিয়ার স্থানীয় এক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র ছিল। হত্যার শিকার বাবুল ঠাঁকুরগাও জেলার পীরগঞ্জের লোহাগড়া গ্রামের মৃত সইর উদ্দিনের ছেলে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিন নম্বর ছিলেন বাবুল। দরিদ্র পরিবারের বাবুল গ্রামে কৃষি কাজ করতেন। পরে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় কাজ নেন ও স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস শুরু করেন। স্ত্রীও পোশাক কারখানা চাকরি নিয়েছিলেন।

নিহত বাবুলের বড় বোন মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ভাইটা জীবনে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। দুর্বল থেকে সবল হলো। তারপরই তাদের এভাবে মেরে ফেলল। আমার ভাইয়ের কোনো শত্রু ছিল না। থাকলে তো কখনো আমাদের একটু হলেও বলতো। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।

প্রতিবেশীদের তাদের সাথে তেমন সম্পর্ক ছিল না। ফলে নিহতদের বিষয়ে তারা কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এই বাসায় তারা দীর্ঘ আট বছর বসবাস করে আসছিলেন।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হত্যাকাণ্ড দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। অচেতন করার পর তাদের হত্যা করা হয়। মরদেহ দেখে মনে হচ্ছে, প্রায় ৩৬ থেকে ৪০ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ শুক্রবার এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তাদের কোনো কিছু খোয়া যায়নি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে এখনি সুনির্দিষ্ট কারণ বলা যাচ্ছে না। সবগুলো বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।